তোমরা সবাই ইলেকট্রিক লাইনের গায়ে নানা রকম সতর্কবাণী দেখেছ, যেমন, “বিপজ্জনক দশ হাজার ভোল্ট।” তোমরা সবাই জানো ইলেকট্রিক শক বলে একটা বিষয় আছে, এটি খুব বিপজ্জনক। অসতর্ক মানুষ ইলেকট্রিক শক খেয়ে মারা গেছে সে রকম উদাহরণও আছে। তোমরা যদি বিভব বিষয়টা বুঝে থাক তাহলে নিশ্চয়ই এখন অনুমান করতে পারছ আসলে কী ঘটে। কোথাও যদি বিভব বা পটেনশিয়াল বেশি থাকে এবং তুমি যদি সেটা স্পর্শ করো, তোমার শরীরের পটেনশিয়াল যেহেতু কম সেজন্য বেশি বিভবের জায়গা থেকে চার্জ তোমার শরীরে চলে আসবে। চার্জের সেই প্রবাহ কতটুকু তার ওপর নির্ভর করে তোমার ভেতরে অনেক কিছু হতে পারে।
তুমি যেটা স্পর্শ করছ তার পটেনশিয়াল পজিটিভ বা নেগেটিভ দুটোই হতে পারে। এক জায়গায় তোমার শরীর থেকে চার্জ (ইলেকট্রন) যাবে অন্য ক্ষেত্রে তোমার শরীরে চার্জ আসবে, দুটোই বিদ্যুৎ প্রবাহ—শুধু দিকটা ভিন্ন ।
তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ চার্জ প্রবাহিত হয় বিভব পার্থক্যের জন্য, বিভবের মানের জন্য নয়। সে কারণে একটা কাক যখন হাইভোল্টেজ ইলেকট্রিক তারের ওপর বসে সে ইলেকট্রিক শক খায় না, কারণ তারের বিভব এবং তার নিজের বিভব সমান, কোনো পার্থক্য নেই। শুধু তাই নয়, দশ হাজার কিংবা বিশ হাজার ভোল্টের প্রচণ্ড উচ্চ ভোল্টেজে কর্মীরা হেলিকপ্টার দিয়ে খালি হাতে কাজ করে। তারা কোনো ইলেকট্রিক শক খায় না। কারণ শূন্যে থাকার কারণে তারা যখন হাইভোল্টেজ তার স্পর্শ করে তাদের শরীরের ভোল্টেজ তারের সমান হয়ে যায়। কোনো পার্থক্য নেই, তাই কোনো চার্জ প্রবাহিত হয় না। তারা ইলেকট্রিক শক খায় না। তার মানে হচ্ছে ভোল্টেজের পার্থক্যটা গুরুত্বপূর্ণ, ভোল্টেজের মান নয়—এটা সবার জানা দরকার।
তারপরও যখন ভোল্টেজের মান মাপতে হয় তখন তার জন্য একটা নির্দিষ্ট ভোল্টেজ থাকলে ভালো। তাপমাত্রার বেলায় একটা পরম শূন্য তাপমাত্রা ছিল, অনেকটা সে রকম। আমাদের জীবনে আমরা পৃথিবীকে শূন্য বিভব ধরে নিই। পৃথিবীটা এত বিশাল যে এর মাঝে খানিকটা চার্জ দিলেও সেটা গ্রহণ করতে পারে তার জন্য তার বিভব বেড়ে যায় না, আবার খানিকটা চার্জ নিয়ে গেলেও তার বিভব কমে যায় না। তাই সেটাকে শূন্য বিভব ধরে সবকিছু তার সাপেক্ষে মাপা হয়। তোমরা নিশ্চয়ই লক্ষ করে থাকবে ভারী বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি সব সময় খুব ভালো করে ভূমির সাথে লাগানো (Earthing) হয়। যার অর্থ কোনো দুর্ঘটনায় হঠাৎ করে কোনো কারণে যদি প্রচুর চার্জ চলে আসে তাহলে সেটা যেন দ্রুত এবং নিরাপদে পৃথিবীর মাটিতে চলে যেতে পারে, যারা আশপাশে আছে তাদের যেন কোনো ক্ষতি না হয়।
Read more